দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | Doinondin Jibone Biggan Rochona

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে প্রায়শই বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে। আজকের এই আর্টিকেলে, আমি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরব যাতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে। এই রচনাটি সকল ক্লাসের জন্য উপযুক্ত। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা

বর্তমান যুগকে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান আমাদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই অপরিহার্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবন বিজ্ঞান ছাড়া অকল্পনীয়। এখন যে কোনো ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষ বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞানের অবদান চোখে পড়ার মতো। তাই বলা যায় বিজ্ঞান এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিয়ন্ত্রক।

প্রাত্যাহিক জীবনে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এখন প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্যে আধুনিক জীবনযাপন করছে। আমি বসে বসে এই রচনাটি লিখতে গিয়ে - আমার হাত - কলম এবং কালি, লেখার কাগজ, এমনকি বসার জায়গাতেও বিজ্ঞানের প্রভাব রয়েছে। আমাদের রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সবখানেই বিজ্ঞানের অবদান অসীম। শুধু তাই নয়, আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বলা যায় বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন অচল।

নগর/শহর জীবনে বিজ্ঞান

এখন দেখা যাক নগর জীবনে বিজ্ঞান কতটা গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ শহরের মানুষ বিজ্ঞানের ওপর কতটা নির্ভরশীল। অন্য কথায়, শহুরে জীবনে মানুষ ও বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শহরের অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দ আমাদের জাগিয়ে তোলে, আমরা যে ঘুম থেকে জেগে উঠে টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করি, এগুলো বিজ্ঞানের উপহার। 

পত্রিকাটিও বিজ্ঞানের এক বিশ্ময়কর উপহার। তারপর গ্যাস বা হিটার বা চুলায় তাড়াতাড়ি রান্না করা। রিকশা, অটোরিকশা, বাস, ট্রেন বা মোটরসাইকেলে করে কাজে পৌঁছানো সবই বিজ্ঞানের দান। সিঁড়ির বদলে লিফট এর সাহায্যে অফিসে যাওয়া, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠানো বিজ্ঞান ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।  

কম্পিউটারে কাজ করা, ক্লান্ত শরীরকে আরাম দেবার জন্য এসি বা বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে থাকা ইত্যাদি ভাবে আমরা সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে জীবন চালিয়ে যাই। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার বা টিভি অন করে মনকে সতেজ রাখার চেষ্টা করা, সেটাও বিজ্ঞানের অবদান। 

ছেলে মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নোট রাখে; মাঝে মাঝে ভিডিও গেম খেলা, ইনটারনেট ব্রাউজ করা সহ সকল কাজের মধ্যেই রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। এভাবে জীবনের প্রতিটি ধাপে বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি। মোটকথা, নগরজীবন সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিশাল শহুরে বিল্ডিংগুলিতে এত লোক বাস করে তাও বিজ্ঞানের কারণে সম্ভব।

গ্রামীন জীবনে বিজ্ঞান 

অস্বীকার করার উপায় নেই যে নগরজীবনের তুলনায় গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া তুলনামূলকভাবে কম। বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। শুধু বিজ্ঞানের অবদানেই দিন দিন গ্রামীণ ও শহুরে জীবনের পার্থক্য কমে যাচ্ছে। যোগাযোগ ও পরিবহনে বিজ্ঞানের আশ্চর্যজনক অবদানের কারণে আজ মানুষ দূরবর্তী প্রতিবেশীদের কাছে যোগাযোগ করতে পারছে। বাস, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল এখন গ্রামীণ জীবনের একটি অংশ।  

ফলে বিজ্ঞান শহরের জীবন পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছেছে। বর্তমানে গ্রামীণ জীবনও ক্রমশ বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন, টর্চ, স্লো, সাবান, গুঁড়া, আয়না-চিরুনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে মিশে গেছে। 

শহরের মানুষ যেমন তাদের জীবনকে সহজ করার জন্য বিজ্ঞানকে নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছে, তেমনি ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবের অপকারিতা

বিজ্ঞান যে উপকার নিয়ে আসে তা কিন্তু নয়। কিছু ক্ষেত্রে, এর প্রভাবের কারণে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের অনেক ক্ষতি করছে। 

মানুষ যন্ত্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে কাজ করতে বিমুখ হয়ে পড়ছে। এখন মানুষ শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক কাজ বেশি করে। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শর্টটাইম মেমোরি অওস হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের জীবনে কৃত্রিমতা বাড়ছে। 

স্নেহ, ভালবাসা, সহানুভূতির মতো মানবিক গুণাবলী হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক যন্ত্রপাতির উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।

উপসংহার 

বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি আশীর্বাদ। সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের যা কিছু দরকার তা বিজ্ঞানের অবদান। 

বিজ্ঞান আজ আমাদের নিত্যসঙ্গী। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব শুধু ভালোই নয়, ক্ষতিকরও বটে। এটা আমাদের জন্য উপকারী বা ক্ষতিকর কিনা তা আমরা কিভাবে ব্যবহার করি তার উপর নির্ভর করে। তাই বিজ্ঞানের অপব্যবহার না করে কিভাবে মানব কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

TAG: রচনা, বাংলা রচনা, ব্যাকরণ, বিজ্ঞান রচনা, Rochona, Biggan Rochona, Bangla Essay, মানব জীবনে বিজ্ঞান, প্রাত্যাহিক জীবনে বিজ্ঞান, কৌনিক ব্লগ, সহবাংলা আইটি, Sohobangla iT, Kounik Blog.

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now